কোরবানির পশু বেচাকেনা এবং ঘরমুখো মানুষের নিরাপত্তা নিশ্চিতে নির্দেশনা

newsdesk
newsdesk newsdesk
প্রকাশিত: ১২:১০ পূর্বাহ্ন, ১৩ জুন ২০২৪ | আপডেট: ১২:৫৩ পূর্বাহ্ন, ২৪ জুন ২০২৪

ঈদে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিকসহ কোরবানির পশু বেচাকেনা এবং ঘরমুখো মানুষের সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সংশ্লিষ্ট বিভাগের সমন্বিতভাবে গৃহীত কার্যক্রম নিয়ে গতকাল মঙ্গলবার প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে এক উচ্চ পর্যায়ের সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে।   
প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব মো. তোফাজ্জল হোসেন মিয়ার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এ সভায় সার্বিক আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে, কোরবানীর পশুর সহজলভ্যতা, পরিবহন, হাট ব্যবস্থাপনা, অনলাইন মার্কেট মনিটরিং, ঈদযাত্রা, কোরবানীর বর্জ্য ব্যবস্থাপনা, চামড়া সংরক্ষণ ও ব্যবস্থাপনা, ঈদ ফিরতি যাত্রা নির্বিঘœ করতে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।
ঈদে নিত্যপণ্যের সরবরাহ, মজুদ ও মূল্য নিয়ন্ত্রনের উপর বিশেষ গুরুত্ব প্রদান করে সংশ্লিষ্ট দপ্তরসমূহকে ব্যবস্থা নেয়ারও নির্দেশনা দেয়া হয়।
সভায় বিদ্যুৎ বিভাগের সিনিয়র সচিব মো. হাবিবুর রহমান, মহাপুলিশ পরিদর্শক (আইজিপি) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুন, প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব মো. নাঈমুল ইসলাম খান, সড়ক পরিবহণ ও মহাসড়ক বিভাগের সচিব এ বিএম মোমিন উল্লাহ নূরী, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রনালয়ের সুরক্ষা সেবা বিভাগের সচিব মো. আবদুল্লাহ আল মাসুদ চৌধুরী, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রনালয়ের জন নিরাপত্তা বিভাগের সচিব মো, জাহাঙ্গীর আলম, রেলপথ মন্ত্রনালয়ের সচিব মো. হুমায়ুন কবীর, ও ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) কমিশনার হাবিবুর রহমান প্রমূখ উপস্থিত ছিলেন।          
সভার শুরুতে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের মহাপরিচালক (প্রশাসন) একটি সমন্বিত প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন। সিনিয়র সচিব ও সচিববৃন্দ, পুলিশের মহাপরিদর্শক, বিজিএমইএ'র প্রতিনিধি, বিভিন্ন দপ্তর অথবা সংস্থার প্রধান ও প্রতিনিধিগণ, স্ব-স্ব দপ্তরের প্রস্তুতি ও সমন্বয়ের বিষয়াদি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা ও সিদ্ধান্তসমূহ সভায় গ্রহণ করা হয়। কোরবানির পশু নিয়ে যাতে কোনরূপ কৃত্রিম সংকট যেন তৈরি না হতে পারে, সেলক্ষ্যে সংশি¬ষ্ট সকলের সাথে সমন্বয় করে প্রয়োজনীয়  ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশনা দেয়া হয়। 
কোরবানির পশুর সহজলভ্যতা এবং ক্রয়-বিক্রয়ে যৌক্তিক মূল্য নিশ্চিত করতে সতর্ক নজরদারি অব্যাহত রাখতে হবে। অনলাইন মার্কেটের মনিটরিং জোরদার করতে হবে। কোরবানির পশুর হাটসহ পশু পরিবহন, ক্রেতা-বিক্রেতার নিরাপত্তা এবং যেকোন ধরনের প্রতারণারোধে আইন-শৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীকে সম্ভাব্য সকল ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ করতে বলা হয়।
সভায় যানজটমুক্ত চলাচল নিশ্চিতের বিষয়টি মহাসড়কের পাশে কিংবা যত্রতত্র কোরবানির পশুর হাট গড়ে উঠার সাথে অনেকাংশে সম্পর্কযুক্ত বলে অভিমত ব্যক্ত করে হাট স্থাপনের অনুমতি প্রদানের ক্ষেত্রে আন্ত:দপ্তর সমন্বয়ের উপর গুরুত্বারোপ করা হয়।
ঈদে রেলযাত্রা, রেলের টিকিটপ্রাপ্তি এবং সিডিউল রক্ষার বিষয়ে গৃহীত পরিকল্পনা ও কার্যক্রম রেল সচিব সভায় তুলে ধরা হয়। রেলের টিকিটপ্রাপ্তিতে যেকোন ধরনের ভোগান্তি, হয়রানি, প্রতারণারোধে সর্বোচ্চ সতর্কতামূলক ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য নির্দেশনা প্রদান করা হয়। 
বর্ষা মৌসুম বিবেচনায় রেখে ঈদে ঘরমুখী ও ফিরতি মানুষের নৌযাত্রায় গৃহীত ব্যবস্থা সম্পর্কে নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব গৃহীত প্রস্তুতি সম্পর্কে সভাকে অবহিত করেন। নৌযানসমূহে অতিরিক্ত যাত্রী পরিবহন বারিত করতে কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণের নির্দেশনা প্রদান করে নৌযানসমূহের ফিটনেস নিশ্চিত করতে নির্দেশনা প্রদান করেন। 
সড়কপথে ঈদযাত্রা নিরাপদ ও নির্বিঘ্ন করতে সংশ্লিষ্ট দপ্তরসমূহ নিজেদের মধ্যে আন্ত:সমন্বয়ের মাধ্যমে সকল কার্যক্রম গ্রহণ করবে।
পুলিশ মহাপরিদর্শক যানজটমুক্ত ঈদযাত্রা নিশ্চিত করতে হটস্পট চিহ্নিতকরণ, হটস্পটসমূহে পুলিশসহ সংশি¬ষ্ট দপ্তরসমূহের দায়িত্বশীল জনবলের উপস্থিতি ও প্রয়োজনীয় সমন্বয় নিশ্চিত করবে।
এফবিসিসিআই ও বিজেএমইএ তাদের কর্মীদের একত্রে ছুটি প্রদান না করে ধাপে ধাপে ছুটি প্রদানের বিষয়টি বিবেচনা করে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করবে।
ঈদযাত্রা নির্বিঘ্ন ও যানজটমুক্ত রাখতে হটস্পট চিহ্নিতকরণ, হটস্পটসমূহে অতিরিক্ত জনবল নিয়োগ, দুর্ঘটনায় পতিত কিংবা বিকল যানবাহন তাৎক্ষনিকভাবে অপসারণে নিবিড় সমন্বয় ও কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করতে হবে।
অনলাইন প্ল্যাটফর্মে টিকিট বিক্রয়ের বিষয়টি নিবিড়ভাবে মনিটরিংসহ সাইবার নিরাপত্তার বিষয়টিও গুরুত্বের সাথে নজরদারি করতে হবে।
বিমান ভাড়া যৌক্তিক পর্যায়ে রাখার জন্য বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয় প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করবে।
নির্দিষ্ট স্থানে পশু কোরবানি ও আবর্জনা অপসারণ করতে হবে।
স্থানীয় সরকার বিভাগ হতে সিটি কর্পোরেশন, পৌরসভা ও ইউনিয়ন পরিষদকে নির্দিষ্ট স্থানে পশু কোরবানির বিষয়ে যে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা প্রদান করেছে তা সুষ্ঠুভাবে বাস্তবায়ন নিশ্চিত করতে হবে।
ঢাকা উত্তর ও ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনকে প্রত্যক্ষ ও সরেজমিন তত্ত্বাবধানে স্বল্পতম সময়ে শতভাগ বর্জ্য অপসারণ করতে হবে এবং পূর্ব থেকেই পরিকল্পনামাফিক পর্যাপ্ত পরিচ্ছন্নতাকর্মী এবং বর্জ্য পরিবহনকারী গাড়িসহ প্রয়োজনীয় সকল ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
স্থানীয় প্রশাসন ব্যবসায়ী ও সংশি¬ষ্টদের নিয়ে সভা করে চামড়ার মূল্য নির্ধারণসহ চামড়া সংরক্ষণ ও ব্যবস্থাপনার বিষয় সার্বিকভাবে বিবেচনা করে স্থানীয় বাস্তবতার নিরিখে প্রয়োজনীয় সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবে।
দেশের সকল প্রান্ত হতে ঢাকায় একত্রে সকল চামড়া প্রবেশ করে পঁচে যাওয়ার সম্ভাবনা সৃষ্টি না হয়, সেজন্য ঈদ পরবর্তী ন্যূনতম ১০ দিন কোন প্রকার চামড়া ঢাকায় প্রবেশ করতে দেয়া যাবে না। চামড়া সংরক্ষণে স্থানীয় প্রশাসন সংশি¬ষ্ট সকলকে নিয়ে জনসচেতনতা সৃষ্টির জন্য কার্যকরি পদক্ষেপ গ্রহণ করবে। 
ঈদ-উল-আযহায় নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যের মজুদ ও সরবরাহ এবং মূল্য স্থিতিশীল রাখতে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়/ বিভাগ ও দপ্তরসমূহের নিবিড় মনিটরিং এবং কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ করবে।
দেশের সকল ঈদের জামাতের নিরাপত্তা বিধানকল্পে স্থানীয় প্রশাসন প্রয়োজনীয় ব্যবস্থাসহ সকল প্রকার ব্যবস্থা গ্রহণ করবে এবং আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এ বিষয়ে সতর্ক নজরদারি করবে।
ছিনতাই, রাহাজানি, প্রতারণার মতো গণ-উপদ্রব সৃষ্টিতারী চক্রসমুহের অপকৌশলকেনসাৎ করার কাযৃ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। শপিংমল, মাকেংট, বিপণিবিতানসমূহে প্রয়োজনীয় নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। 
গার্মেন্টস মালিকগণ তাদের কর্মীদের প্রাপ্য মজুরি অগ্রীম বোনাসসহ প্রদানের ব্যবস্থা নিতে হবে এবং গণমাধ্যমে প্রচারের ব্যবস্থা নিবেন।
সরকারি ছুটির সাথে গার্মেন্টস খাতের ছুটি সমন্বয় করে আগে-পরে পর্যায়ক্রমে ছুটি নির্ধারণ নিশ্চিত করতে হবে।